হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি নতুন নয়। তবে দিন দিন দেশ থেকে এ পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১৫ শতাংশ। স্থানীয় বাজারেও এ পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অর্থবছরে এক কোটি ৬৭ লাখ ডলারের হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
আগের অর্থবছরে একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল এক কোটি ৪৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশে হ্যান্ডিক্রাফট পণ্যের বর্তমান বাজার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার। গত অর্থবছরে দেশ থেকে মোট তিন হাজার ৬৬৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।
জানা গেছে, ৫০টির বেশি দেশে হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি করেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। সাধারণত, বাংলাদেশ থেকে পাটের তৈরি পণ্য, বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন ধরণের বাস্কেট, ফ্লোর কাভারিংয়ের ম্যাট বা কার্পেট, নকশি কাঁথা ও নকশি বেডশিট এবং পুনপক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি কিছু পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আমাদের দেশের হ্যান্ডিক্রাফট যায়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চায়না, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডেরমত দেশগুলো যারা হ্যান্ডিক্রাফট উত্পাদনের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তারা এখন হাইটেক ইন্ড্রাস্ট্রির দিকে যাচ্ছে। ফলে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করার সুযোগ আছে। আগের এসব পণ্যের ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতো না এখন তারা বাংলাদেশের আসছেন বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রাফট অ্যান্ড গিফটওয়্যার এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবু আলম চৌধুরী বলেন, দেশের প্রায় ৫০ লাখ মানুষ হ্যান্ডিক্রাফট খাতের সঙ্গে জড়িত। অনেক জনবলের এ খাতের বিষয়ে আমাদের দেশে কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে এ বিষয়ে কোন গবেষণাও হচ্ছে না। এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডিজাইনার ও উদ্ভাবন নেই বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, এ খাতে খুব কম বিনিয়োগ করা লাগে। এছাড়া বড় ধরণের মেশিনেরও দরকার হয় না। তাই আমাদের যে জনশক্তি আছে তাকে কাজে লাগিয়ে এ খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ বহুমুখি পাটপণ্য সমিতি’র আহ্বায়ক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, আমাদের দেশে হ্যান্ডিক্রাফটের সম্ভাবনা অনেক। কারণ, এখানে অল্প টাকায় দক্ষ শ্রমিক পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর পরিমাণে হ্যান্ডিক্রাফট বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এ খাতের চ্যালেঞ্জের বিষয়ে বলতে যেয়ে তিনি জানান, দেশে এ খাতের কাঁচামাল প্রচুর আছে তারপরও কিছু কাঁচামালের অভাব রয়েছে। সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় তা বিদেশ থেকে আমদানিও করা যাচ্ছে না।
আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে যে ধরণের পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করার জন্য আমাদের দেশে পেশাদারী কোন ডিজাইনার নেই। কোন পণ্যের সঙ্গে কোন রং যাবে সে বিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য পেশাদারী কেউ নেই। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পণ্য পরিচিত করার জন্য যে ধরণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সে ধরণের উদ্যোগের অভাব আছে বলে তিনি মনে করেন।
সম্ভাবনাময়ী এ খাতের জন্য যেখাবে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে এ খাতের সুযোগ সুবিধা আরো কমছে। এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, গেল অর্থবছরে হ্যান্ডিক্যাফট রপ্তানিতে ২০ শতাংশ ক্যাশ ইনসেনটিভ ছিল, চলতি অর্থবছরে তা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ খাতের কাঁচামাল আমদানি করতে বন্ড সুবিধা দেওয়া হয় না। রপ্তানি আয় বাড়নো ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কাঁচামাল আমদানির জন্য বন্ড সুবিধা চান এ খাতের উদ্যোক্তারা।
দেশে বিদেশে হ্যান্ডিক্রাফটের সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তা আসছেন এ খাতে। সম্প্রতি ফোক্ আর্টস নামের ব্রান্ডে দেশে বিদেশে পণ্য সরবরাহ করছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন রাহাত। তিনি বলেন, মানসম্পন্ন পণ্যের কদর সব জায়গায় সেটা দেশে হোক কিংবা বিদেশে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে অন্য গতানুগতিক চাকরি না করে ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করা এ উদ্যোক্তা বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয় এগুলোর প্রচার প্রচারণা সেভাবে না থাকায় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা হারিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সেসব পণ্য ওইসব অঞ্চল থেকে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করছি।
তথ্যসূত্র: ডেইলি ইত্তেফোক ডটকম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।